অতিরিক্ত ফর্সা হওয়াটাও কি দোষের কিছু? হ্যাঁ, বলিউডে কারও কারও বেলায় হয়েছিল সেটাই। ত্বকের রঙ বাদামী হলে কী সমস্যা? অথচ সেটাই বড়ো সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কারও কারও বেলায়। শরীর ঠিক আছে, কিন্তু সিক্স প্যাক অ্যাবস নেই। হ্যাঁ, সেটাও সমস্যা। কারও লুক ডাস্কি, কারও লুক চকলেট বয়, কারও আবার টম বয় লুক – এই সবকিছুই যেন দারুণ দোষ! ক্যারিয়ারের শুরুতে বলিউডের জনপ্রিয় তারকাদের অনেককেই এইসব দোষ, খুঁত আর সমস্যা দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছিল অডিশন থেকে। কাউকে কাউকে অভিনয় করিয়ে এমনকি পারিশ্রমিকই দেওয়া হয়নি। এখানে থাকছে ১০ বলিউড সুপারস্টার-এর কাহিনী।
অমিতাভ বচ্চন
অভিনয়, সৌন্দর্য আর ছয় ফিটেরও বেশি উচ্চতার গড়নের জন্য অমিতাভ বচ্চনকে ডাকা হয় টল ডার্ক হ্যান্ডসাম বলে। অথচ বলিউডে ক্যারিয়ারের শুরুতে ঘোড়ামুখো চেহারা, গায়ের রঙ আর কণ্ঠস্বর নিয়ে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি তাকে। এইসব কারণ দেখিয়ে বিগ-বিকে বাদ দেওয়াও হয়েছিল অনেকবার। অমিতাভের সমসাময়িক আরেক সুপারস্টার পারভিন ববি তো এই সেদিনও সরাসরি ব্যঙ্গ করেছেন অমিতাভকে। বলেছেন, ‘একটা সময় ভারতে অনেক সুপুরুষ ছিলেন। দেবানন্দ, ফিরোজ খান, রাজ কাপুর, ধর্মেন্দ্র, শশী কাপুরসহ আরও অনেকে। এমনকী সঞ্জয় গান্ধীও অমিতাভ বচ্চনের থেকে দেখতে ভালো!’ পরবর্তী ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এখন অমিতাভ বচ্চন।
শাহরুখ খান
এখন তাকে বলা হয় ‘বলিউডের বাদশা’। অথচ ক্যারিয়ারের শুরুতে কী কষ্টই না করতে হয়েছে তাকে। চেহারা সুবিধার নয়, নায়ক হওয়ার উপযুক্ত নয়, লুক ভালো নয় – কতো কী কারণ দেখানো হয়েছিল তাকে অভিনয় করতে গিয়ে। কতোবার যে তাকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল অডিশন থেকে। আর এখন বলিউড নামের সমার্থক হয়ে উঠেছেন কিং খান।
ক্যাটরিনা কাইফ
বলিউডে তখন মাত্রই পা রেখেছেন ক্যাটরিনা। সংগ্রাম করছেন প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না। তার চেহারায় বিদেশি ছাপ থাকায় এই বলিউড ডিভার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন পরিচালকরা।
অজয় দেবগণ
জনপ্রিয় এই অভিনেতাকেও ক্যারিয়ারের শুরুতে করতে হয়েছিল সংগ্রাম। চেহারা তারা নায়কোচিত নয় – এমন অভিযোগ প্রায়ই শুনতে হতো তাকে। বলা হতো, দেখতে তিনি বেশ কৃষ্ণকায়। ফলে বেশ কটি সিনেমা থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। অথচ কী অভিনয়, কী অ্যাকশন – সবক্ষেত্রেই দারুণ দক্ষ এই অভিনেতা পরবর্তীকালে দর্শকমন জয় করেছেন দারুণভাবে। ১৯৯১ সালে প্রথম সিনেমা “ফুল অউর কাঁটে” চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ফিল্মফেয়ার বেস্ট ডেবিউ অ্যাকটর (মেল) পুরস্কার পান ৷ ওই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি অ্যাকশন হিরো হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ৷এর পরবর্তী বছর তার অভিনীত ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র জিগার মুক্তি পায় ৷
রণবীর সিং
বহুল আলোচিত ‘পদ্মাবত’ এই তারকা তার ক্যারিয়ারের শুরুতে একাধিক অডিশনে বাদ পড়েছিলেন কেবল চেহারা, দেহের গঠন ও মুখমণ্ডলের আকারের জন্য। পরের ইতিহাস অন্য। অভিনয় দিয়ে এখন তিনি দর্শকদের মন জয় করে চলেছেন।
আনুশকা শর্মা
রণবীর সিংয়ের পরিণতি হয়েছিল আনুশকা শর্মার বেলায়ও। পরিচালকরা বারবার এই বলে তাকে বাতিল করে দিচ্ছিলেন, তিনি নাকি গ্ল্যামারাস নন! দেখতেও নাকি খুব সাদামাটা। ফলে ক্যারিয়ারের শুরুতে একাধিক অডিশনে বাদ পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলীর এই জীবনসঙ্গী।
ইরফান খান
নায়কোচিত নন, এই অজুহাতে দারুণ মেধাবী এই অভিনেতাকে বহুবার বাদ দেওয়া হয়েছিল বলিউডের বিভিন্ন সিনেমা থেকে। এমনকি একবার কাজ করিয়ে পারিশ্রমিকও দেওয়া হয়নি বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খানকে।
কঙ্কণা সেনশর্মা
বলিউডে ক্যারিয়ারের শুরুতে কঙ্কণা সেনশর্মার বিরুদ্ধে পরিচালকদের অভিযোগ ছিল, তার লুক ভালো নয়, দেখতে তিনি কৃষ্ণকায়। হলে কী হবে, পরবর্তীকালে প্রাণবন্ত অভিনয়শৈলী দিয়ে মন জয় করেছেন সিনেমা দর্শকের।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী
এটা এক দারুণ ট্রাজেডি যে, বলিউডে প্রতিষ্ঠা পেতে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর মতো সংগ্রাম খুব কম অভিনেতাকেই করতে হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন পরিচালকদের দুয়ারে, কিন্তু বারেবারেই বাদ পড়েছেন তিনি। নিতান্তই কারও মন গললে তাকে নেওয়া হতো ছোট কোনো চরিত্রে। অদম্য নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী সেই ছোট চরিত্র থেকেই নিজেকে প্রমাণ করে আজ তারকা।
টাবু
চেহারা নয়, রঙ নয়, টাবুর সমস্যা ছিল অন্যখানে। অনেক পরিচালকের ধারণা ছিল, টাবু লুকটা ‘টম বয়’-এর মতো, যা কিনা নায়িকা হওয়ার উপযুক্ত নয়। শ্রেফ এই কারণে টাবুকে বহুবার বাতিল করা হয় ছবি থেকে! পরে নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নিজের মেধা প্রমাণ করে এই অভিনেত্রী।