ভুল শ্রাবন্তীরও আছে, মানছেন নিজেই

ঘটনার মূলে পরকীয়া?

0

ছোট ও বড় পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় তারকা ইপ্সিতা শবনম শ্রাবন্তী এই পর্যায়ে এসে নিজেই মানছেন, ভুল তারও আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন – ‘সত্য-মিথ্যা অনেক কথা আসবে। কিন্তু একজন মা আর একজন মানুষ হিসেবে আমার একটাই চাওয়া, আমার সঙ্গে আর আমার সন্তানদের সঙ্গে কোনো অন্যায় না হোক। আমার বাচ্চারা ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বড় না হোক, এর ফল কখনোই ভালো হয় না। ভুল আমারও আছে, খোরশেদ আলমেরও আছে, তাই বলে ডিভোর্স করে আলম বাচ্চাদের সঙ্গে আর আমার সঙ্গে এমন অন্যায় করতে পারে না।’ ফেসবুকে শ্রাবন্তী আরও লিখেছেন, ‘বাচ্চাদের কোনো দোষ নেই। ওদের মাকেও প্রয়োজন, বাবাকেও প্রয়োজন। ওরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবাই দোয়া করবেন, আমার বাচ্চারা যেন সুস্থ থাকতে পারে। মা-বাবা দুজনকেই যেন ওরা কাছে পায়। আমার বাচ্চাদের সঙ্গে অন্যায় না হোক, এটাই আমার চাওয়া।’

প্লিজ, আমার সংসারটা বাঁচান। আমি সংসার ভাঙতে দেব না

ছোট ও বড় পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় তারকা শ্রাবন্তী দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। গত ২৫ জুন তিনি দেশে এসেছেন। এর আগে গত ৭ মে তাঁকে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছেন তাঁর স্বামী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। জানা গেছে, বগুড়া সদরের কালীতলার শিববাড়ি সড়কে শ্রাবন্তীর বাবার বাসার ঠিকানায় এই নোটিশ পাঠানো হয়। কিন্তু ওই সময় তা কেউ গ্রহণ করেননি। শ্রাবন্তী আগেই জানিয়েছেন, তিনি এ ধরনের কোনো কাগজ হাতে পাননি। অন্যদের কাছ থেকে এই তালাকের নোটিশের কথা জানতে পেরেছেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত দেশে এসেছেন। তাঁদের বড় মেয়ে রাবিয়াহ আলমের বয়স সাত আর ছোট মেয়ে আরিশা আলমের সাড়ে তিন বছর।

শ্রাবন্তীর স্বামী খোরশেদ আলম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পাশাপাশি তিনি এনটিভির মহাব্যবস্থাপক (অনুষ্ঠান) ছিলেন। কাজ করেছেন চ্যানেল নাইনে। এখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েই আছেন। জানা গেছে, এখন পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে শ্রাবন্তী বা তাঁর বাচ্চাদের দেখা হয়নি। স্বামীর সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। গত রোববার সকালে শ্রাবন্তী বলেন, ‘প্লিজ, আমার সংসারটা বাঁচান। আমি সংসার ভাঙতে দেব না।’

শ্রাবন্তীর এই আবেদনের পর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেকেই আলাদাভাবে শ্রাবন্তী ও খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশানুরূপ কোনো ফল তাঁরা পাননি। অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি শহিদুল আলম সাচ্চু বলেন, ‘যদিও এটা পারিবারিক ব্যাপার, তারপরও আমরা যুক্ত হয়েছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

শ্রাবন্তীর যতো অভিযোগ

শ্রাবন্তী এর আগে অভিযোগ করে বলেন, ‘২৫ জুন দেশে আসার পর আমি রামপুরা বনশ্রীতে আলমের মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু আমাকে আর বাচ্চাদের বাসায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ঢাকায় আমার নিজের কোনো বাসা নেই। শেষে পরিচিতদের সহযোগিতায় এক মামাতো ভাইয়ের বাসায় যাই। এরপর এখন পর্যন্ত আলম আমার সঙ্গে, এমনকি বাচ্চাদের সঙ্গেও দেখা করেনি। বাচ্চাদের কোনো খোঁজ নেয়নি। গত এপ্রিল মাসে আলম যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ওই সময় আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেনি। আমার দুই বাচ্চা সেখানে সরকারের কাছ থেকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পায়। আলম আমাকে না জানিয়ে ব্যাংক থেকে সেই ছয় হাজার ডলার তুলে নিয়ে আসে। সেখানে বাচ্চাদের নিয়ে কীভাবে চলব, কী খাওয়াব, তা ভাবেনি। ও বাচ্চাদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে।’

দেশে ফেরার পর স্বামী খোরশেদ আলমের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন শ্রাবন্তী। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হচ্ছেন। গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘কেন এমন করছ? দাও না আমাদের মাফ করে। এক ঘর দরকার নাই, কিন্তু এক ছাদের নিচে থাকি আমরা। বাচ্চাদের প্রতি একটু দয়া করো।’

শ্রাবন্তী আরও লিখেছেন, ‘তুমি তো প্রতিজ্ঞা করেছিলে, কখনো ছেড়ে যাবে না। এখন কেন ছেড়ে গেছ? আমাদের বাচ্চাদের ভাঙা পরিবারে বড় হতে দিয়ো না। আমি তোমার কাছে হাত জোড় করে বলছি, আমাদের বাচ্চাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়ো না।’

বগুড়া থেকে ৪ জুলাই মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফিরবেন শ্রাবন্তী। এরই মধ্যে গত ২৬ জুন রাজধানীর খিলগাঁও থানায় তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন আর যৌতুকের মামলা করেছেন।

শ্রাবন্তীকে কী ছাড় দিয়েছিলেন খোরশেদ আলম

খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি অনেক ছাড় দিয়ে শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেছিলাম। ২০১০ সালের ২৯ অক্টোবর আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের দুটি বাচ্চা হয়েছে। শ্রাবন্তীর যেসব ব্যাপারে ছাড় দিয়েছি, তা থেকে শ্রাবন্তী এতটুকু সরে আসেনি। এত দিন আমি ব্যাপারগুলো সামনে আনতে চাইনি, কারণ তা আমাদের কারও জন্যই ভালো হবে না। দিনে দিনে আমাদের মধ্যে মানসিক দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস নেই বললেই চলে। যতটুকু অবশিষ্ট আছে, তা শেষ হওয়ার আগেই আমি সরে এসেছি। আমি চাইনি আমাদের সম্পর্কের ক্ষতিকর প্রভাব বাচ্চাদের ওপর পড়ুক।’

আপনাদের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে দুই পরিবারের কারও সঙ্গে আলোচনা করেছেন? কারও সহযোগিতা চেয়েছেন? এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘শ্রাবন্তীর বোন আর দুলাভাইয়ের সঙ্গে বসেছি। অনেক কথা হয়েছে, নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।’

নেপথ্যে পরকীয়া?

এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রাবন্তী অভিযোগ করে জানান, সম্প্রতি তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে আরেকটি মেয়ে চলে এসেছেন। সেই মেয়েটি মালয়েশিয়ায় থাকেন। আগে এনটিভিতে অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনিও বিবাহিত। এখন আলমের সঙ্গে প্রেম করছেন। সেই মেয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছেন শ্রাবন্তী। তাঁর স্বামীকেও নাকি সবকিছু জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তিনি বলেন, ‘এরপর আলমের আচরণ পাল্টে যায়। এসব নিয়ে কথা বলায় আলম আমাকে মারধরও করেছে।’

পরকীয়ার অভিযোগের ব্যাপারে খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া গিয়েছিলাম। তখন ওই মেয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। এর বেশি কিছু না। শ্রাবন্তী এ ব্যাপারকে বড় করে দেখেছে।’ এরপর শ্রাবন্তী খোরশেদ আলমের মুঠোফোন নম্বরের একটি কল লিস্ট পাঠান।

স্বামীর বিরুদ্ধে শ্রাবন্তীর নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলার ব্যাপারে যোগাযোগ করা হয় খিলগাঁও থানায়। খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান বিপিএন বলেন, ‘শ্রাবন্তী যে মামলা করেছেন, আমরা জানতে পেরেছি। তার আগেই স্বামীর কাছ থেকে তাঁকে তালাকের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এ অবস্থায় থানা থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই। তাঁদের দুজনেরই সামাজিক অবস্থান রয়েছে। তাঁদের দুই পরিবারের লোকজন বসে এ ব্যাপারে আপস-মীমাংসা করতে পারে। সেটা দুজনের জন্যই মঙ্গলজনক হবে। তা না হলে জটিলতা বাড়বে।’

আরও পড়ুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।