যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘কোয়ান্টিকো’র লেখকদের দলে আছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখিকা শর্বরী জোহরা আহমেদ। এবার তাঁকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিয়েছে হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের হয়ে প্রচার চালাচ্ছেন শর্বরী৷
‘কোয়ান্টিকো’ সিরিজের ‘দ্য ব্লাড অব রোমিও’ পর্বকে ঘিরে এরই মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ ১ জুন এবিসি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হয় পর্বটি। ‘কোয়ান্টিকো’র ‘দ্য ব্লাড অব রোমিও’ সিরিজে সেদিন দেখানো হয়, কাশ্মীরে এক শান্তি সম্মেলন হবে। এই সম্মেলনকে ভন্ডুল করে দেওয়ার চক্রান্ত করে পাকিস্তানের একটি সংগঠন। এই ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে। তাঁর তদন্তে বেরিয়ে আসে পাকিস্তানের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। আসলে হিন্দুত্ববাদী একটি সংগঠন ওই চক্রান্ত করেছে। কিন্তু তারা পাকিস্তানিদের ওপর দায় চাপাতে চাইছে। সব চক্রান্ত বানচাল করে দেন প্রিয়াঙ্কা। পর্বটি প্রচারিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েন ভারতের জনপ্রিয় এই নায়িকা।
পরে চরিত্রটিতে অভিনয় করার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। নিজেকে একজন ‘গর্বিত ভারতীয়’ হিসেবে উল্লেখ করে এক টুইটার বার্তায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া লিখেছেন, ‘“কোয়ান্টিকো”র ওই পর্ব দেখে যদি কারও মনে আঘাত লেগে থাকে, তাহলে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘কারও মনে আঘাত দেওয়া আমার ইচ্ছা নয় আর তা কখনো হবে না।’হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করেহিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার পোস্টারে অগ্নিসংযোগ করেদুঃখ প্রকাশ করেছেন এবিসি টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষও। এক বার্তায় তারা জানিয়েছে, ‘একটি জটিল রাজনৈতিক পটভূমি’ নিয়ে ‘কোয়ান্টিকো’ সিরিজের ‘দ্য ব্লাড অব রোমিও’র কাহিনি লেখা হয়েছে। এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে, ক্ষমা চেয়েছে। আর এই বার্তায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ব্যাপারে তারা বলেছে, এই কাহিনি লেখার সঙ্গে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
এদিকে শর্বরী জোহরা আহমেদ জানিয়েছেন, ‘কোয়ান্টিকো’ সিরিজের কাহিনি যাঁরা লিখেছেন, তিনি সেই দলের একজন সদস্য৷ ‘কোয়ান্টিকো’র দুটি পর্বের কাহিনির সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে একটি তিনি একাই লিখেছেন, আর অন্যটিতে দুজন লেখকের একজন ছিলেন। এই ‘দ্য ব্লাড অব রোমিও’ পর্বের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য তিনি সবাইকে জানিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শর্বরী জোহরা আহমেদের এই বার্তা দেওয়ার পরও ভারতে একটি বড় জনগোষ্ঠী তাঁকে আক্রমণ করেই যাচ্ছে। পাশাপাশি তাঁকে লাগাতার ধর্ষণ আর হত্যার হুমকি দিয়েছে হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। এই লেখিকাকে ভারত ও হিন্দুবিরোধী প্রচারের একজন মুসলিম এজেন্ট হিসেবে দেখছে তারা।
আর শর্বরী জোহরা আহমেদ গুগল থেকে তাঁর ব্যাপারে জানার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করেছেন।