বলিউডের সুপার স্টার সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী লরেন্স বিষ্ণোই। তাঁর এই পরিকল্পনা নিয়ে মুম্বাই পৌঁছে গেছেন তাঁর দলের তিন সদস্য রাজু, অক্ষয় ও অঙ্কিত। তবে তাঁদের এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাঁরা খুবই দক্ষ শুটার। এখন এই তিনজনকে নিয়ে সালমান খানকে হত্যার ব্যাপারে কী পরিকল্পনা করছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হরিয়ানা পুলিশ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়েছে মুম্বাই পুলিশকে। সালমান খানের সঙ্গে সব সময় তাঁর নিজস্ব দেহরক্ষী থাকেন। এবার মুম্বাই পুলিশের পক্ষ থেকেও দেওয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা। এ ছাড়া সালমান খানের বাড়ি এবং ছবির শুটিং স্পটে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে।
এ বছর জানুয়ারি মাসে সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ভারতের কুখ্যাত সন্ত্রাসী লরেন্স বিষ্ণোই। এ কাজে তিনি নিয়োগ করেন তাঁর দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসী সম্পত নেহরাকে। সম্প্রতি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে হরিয়ানা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সালমান খানকে হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে সব জানা গেছে। সম্পত নেহরার প্রেমিকার ফোনে আড়ি পেতে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। হরিয়ানা পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, সম্পত নেহরা সুপারি কিলিং করে। গুলি চালানোর ক্ষেত্রে তাঁর অব্যর্থ নিশানা। তাই সালমান খানকে খুন করার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। রাজু, অক্ষয় আর অঙ্কিতের ব্যাপারে তাঁরা মুম্বাই পুলিশকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
হরিয়ানা পুলিশ আরও জানিয়েছে, গত সোমবার সম্পত নেহরাকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় পথে পুলিশের গাড়িবহরের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের লোকজন। সম্পত নেহরাকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য বড় পরিকল্পনা করে। কিন্তু হরিয়ানা পুলিশ গোপন সূত্রে আগেই এ খবর পেয়ে যায়। ফলে সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
হরিয়ানা পুলিশের ভাষ্যমতে, রাজস্থান, দিল্লি, হরিয়ানা, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়ে অপরাধমূলক গ্যাংস্টার পরিচালনা করছে সম্পত নেহরা। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের এক নেতাকে হত্যার জন্য চণ্ডীগড়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তিন কোটি রুপি চায় সম্পত নেহরা। এখন তাঁর হয়ে কাজ করছে রাজু, অক্ষয় ও অঙ্কিত।
হরিয়ানা পুলিশের ডিআইজি এসটিএফ সতীশ বালান এর আগে সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে সম্পত নেহরা মুম্বাইয়ে সালমান খানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে গিয়ে এই নায়ক ও অ্যাপার্টমেন্টের অন্যদের গতিবিধি কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেন। বাসার নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখেন। এই সময় সালমান খান বাসার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে বাইরে অপেক্ষা করা ভক্তদের উদ্দেশে হাত নেড়েছেন। তখন সম্পত নেহরা রাস্তা থেকে ব্যালকনির দূরত্ব অনুমান করেন। এরপর সালমানের বাড়ির নিরাপত্তারক্ষীদের জানান, তিনি সালমান খানের বড় ভক্ত। একবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁকে সালমান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। চূড়ান্ত আক্রমণের আগে আরও একবার সেখানে যাওয়ার কথা ছিল সম্পত নেহরার। সেভাবেই লরেন্স বিষ্ণোইর সঙ্গে বসে সালমান খানকে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজিয়েছেন।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সম্পত নেহরা আরও জানিয়েছেন, সালমান খানকে হত্যার এই পরিকল্পনার সঙ্গে আরও ছয়জন জড়িত আছেন। তিনি ধরা পড়লেও এই ছয়জন বাইরে আছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাবেই। সম্পত নেহরার বাড়ি হরিয়ানায়।
জানা গেছে, কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় সালমান খান যোধপুর কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এই পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেন লরেন্স বিষ্ণোই। কৃষ্ণসার হরিণ বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে ঈশ্বরের মতো। এই বিশেষ প্রজাতির হরিণকে আলাদা করে সম্মান করে সম্প্রদায়টি। এই সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে এই হরিণ হত্যার অভিযোগ ওঠে সালমান খানের বিরুদ্ধে। তারা মামলা করে। সেই মামলায় সাজা হয় সালমান খানের। তাঁকে যোধপুর কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এর আগে ‘রেস থ্রি’ ছবির শুটিংয়ের সেটেও নাকি কয়েকজন ঢোকার চেষ্টা করেছিল। তাঁদের আটক করা হয়। পরে জানা যায়, তাঁরা বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের সদস্য।